important of sunnah

‘সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন গঠন

‘সুন্নত’ শব্দের অর্থ সুস্পষ্ট রীতি, নিয়ম বা তরীকা। প্রচলিত অর্থে সুন্নত বলতে হযরত রাসূল (সঃ)-এর রীতিনীতিকে বুঝানো হয়ে থাকে। ইসলাম। পরিভাষায় আল্লাহ এবং রাসূল (সঃ)-এর পছন্দনীয় রীতিনীতি ও নির্দেশিত পথকে সুন্নত নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। হযরত রাসূলে আকরাম (সঃ) ছিলেন উম্মতে মোহাম্মদী’র জন্য শিক্ষক স্বরূপ। মুসলমানদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, ইবাদত-বন্দেগী এবং আদর্শ ও চরিত্র কেমন হবে, শিক্ষাগুরু হিসেবে তিনি নিজের জীবনে এসব বাস্তবে আমল করে উম্মতের জন্য নিদর্শন রেখে গেছেন। তার সারা জীবনের কথা ও কাজের মাধ্যমে রেখে যাওয়া আদর্শ উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য তরীকা বা সুন্নতে রাসূল (সঃ)।

মানবের দেহ এবং আত্মা এই উভয় অংশের উৎকর্ষ সাধন ব্যতীত সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। তাই হযরত রাসূল (সঃ) মানুষের চরিত্র সংশোধনের পদ্ধতি শিক্ষাদানের পাশাপাশি আত্মার উন্নতি সাধনের পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে মানুষ আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে। আত্মিক উন্নতির বলেই মানুষ সৃষ্টির সেরা তথা আল্লাহর প্রতিনিধির মর্যাদা লাভ করতে পারে।

হেদায়াতের দায়িত্ব নিয়োজিত রাসূলের উত্তরসুরি অলী-আল্লাহগণ রাসূলের সুন্নত অনুসারেই মানুষকে সুশিক্ষা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ মানুষের বাহ্যিক চরিত্র এবং আত্মিক উন্নতি বিধানই তাদের লক্ষ্য। তাদের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসারেই রাসূল (সঃ)-এর সুন্নত আদায় হয়।

ফলে, মানুষ তার আধ্যাত্মিক উন্নতি নিজেই পরিষ্কারভাবে অনুভব করতে পারে- বই পড়ে, বাহ্যিক ও আনুষ্ঠানিক ধর্ম আচরণের মাধ্যমে যা অর্জন করা সম্ভব নয়। বেলায়েতের যুগে রাসূলের সুন্নত আমল করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হলে, অলী-আল্øাহর সাহচর্যে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন।

মহানবী (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের ওইসব নীতি-আদর্শ যা উম্মতের জন্য আমলযোগ্য ও শরিয়তে পালনীয় তাকে সুন্নত বলে। মহান আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। আর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রদর্শনের একমাত্র উপায় সুন্নত অনুসরণ। সংগত কারণেই মানবজীবনে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ৩১।

আল কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। বিশেষ করে ওই ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ সুরা আহজাব আয়াত ২১। কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল, আর যে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, আমি আপনাকে তাদের হেফাজতকারীরূপে প্রেরণ করিনি।’ সুরা নিসা আয়াত ৮০। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসবে সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।’ তিরমিজি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে; তবে যে অস্বীকারকারী সে ছাড়া। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! অস্বীকারকারী কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্যতা করে সে অস্বীকারকারী।’ বুখারি।

খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কিরামের সুন্নতের অনুসরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বনি ইসরাইল সম্প্রদায় বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে, সবাই জাহান্নামে যাবে; কিন্তু একটি দল জান্নাতে যাবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ দল কারা? তিনি বললেন, যারা আমার ও আমার সাহাবিদের আদর্শের ওপর অটল থাকবে।’ তিরমিজি।

হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের খোদাভীতির এবং আমিরের আদেশ মান্য করতে উপদেশ দিচ্ছি; যদিও সে একজন হাবশি গোলাম হয়। কেননা আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে অচিরেই তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতকে অবশ্যই আঁকড়ে ধরবে এবং তোমরা তা মাড়ির দাঁত দ্বারা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে।’ মুসলিম, আবু দাউদ।

এমন আরও অনেক আয়াত ও হাদিস দ্বারা এ কথা প্রতীয়মান হয়, মহান আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসার চূড়ান্ত মাপকাঠি হলো রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ। রসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নতের মধ্যে রয়েছে উম্মতের প্রকৃত সফলতা, প্রশান্তি ও কল্যাণ। পক্ষান্তরে রসুল (সা.)-এর আদর্শ পরিপন্থী যাবতীয় পথ-মত, রীতি-নীতি, আইন ও আদর্শ অনুকরণ করে শান্তি সফলতা ও কল্যাণ অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। তাই মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণই হলো ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র উপায়।

রাসূল (সা.)-এর দোয়া ও আল-আযকার

আল আযকারের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। আল আযকার (الأذكار) বা আল্লাহর জিকির করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে, অন্তরের প্রশান্তি আনে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভের উপায় তৈরি করে।

রাসূল (সা.) প্রতিদিন নিয়মিত আল্লাহর জিকির ও দোয়া করতেন, যা আমাদের জন্য সুরক্ষার মাধ্যম।

* সকাল-বিকালের দোয়া:সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি – এই দোয়া ১০০ বার পড়লে গুনাহ মাফ হয়। (বুখারি: ৬৪০৪)

* সকাল-বিকালের দোয়া:সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি – এই দোয়া ১০০ বার পড়লে গুনাহ মাফ হয়। (বুখারি: ৬৪০৪)

* ঘুমানোর দোয়া: বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া (বুখারি: ৬৩২৪)

* রোগমুক্তির দোয়া: আল্লাহুম্মা রব্বান্নাস, আযহিবিল বা’স, ওয়াশফি, আন্তাশ-শাফি...* (বুখারি: ৫৩৫১)

* বিপদ মুক্তির দোয়া: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমিন* (তিরমিজি: ৩৫০৫)

* ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ* (তিরমিজি: ৩৪২৭)

কখন বেশি বেশি আযকার করা উচিত?

সকাল ও সন্ধ্যার আযকার

নামাজের পর

ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে উঠে

কাজের ফাঁকে ফাঁকে

বিপদ-আপদ ও কঠিন সময়ে

দীর্ঘ সফরে

রাসূল (সা.)-এর চিকিৎসা পদ্ধতি (আত্তিব্বুন্নববী)

কালোজিরা – তিনি বলেন, "কালোজিরায় সব রোগের প্রতিকার আছে, মৃত্যু ছাড়া।" (বুখারি: ৫৬৮৮)

মধু – মধু রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হত। (বুখারি: ৫৬৮০)

জলপাই তেল – এটি শরীরে মাখার ও খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলতেন। (তিরমিজি: ১৮৫১)

সেনা পাতা (সানায় মাক্কী) – এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখার জন্য উপকারী।

ঠান্ডা পানি – জ্বর হলে তিনি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতেন। (বুখারি: ৫৭২৩)

রুকইয়াহ (কুরআনিক ঝাড়ফুঁক) – কুরআন ও দোয়া পড়ে রোগের চিকিৎসা করতেন।

AS SUNNAH PRODUCTS

Currently we process one shipping address per order. If you would like to ship to different addresses, you may place separate orders and make payments for them separately.